The historical speech of Sheikh Mujib in Ramna Race Course ground,7th March,1971/ Courtesy: newsbangladesh.com
…আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি, শুধু বাংলা নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা এসেম্বলিতে বসবো। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবো- এমনকি আমি এ পর্যন্তও বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনও যদি সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’
-শেখ মুজিবর রহমান /৭ মার্চ,১৯৭১
“My father was forced to collaborate with Pakistan. His view was-we are a small nation. We can’t take on Pakistan, but Bengalis can. And yet, we were not part of the Bangladesh plan. The Six-point Plan was all about Bengalis, and there was nothing about Chakmas in it. In March 71, who knew the future? -King Devashish Roy (S/O Chakma King Tridiv Roy) / ( সুব্রত শুভ, ১২ জুলাই,২০১৫)
“ ……সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি ।” (বিপ্লবী মুজিব নগর সরকার কর্তৃক গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র, ১০ এপ্রিল,১৯৭১)
‘
১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের হবু সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে গণপরিষদ সদস্য লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধিদল খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর(রাঙ্গামাটি সফরে) কাছেও সেই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি পাহাড়ী প্রতিনিধিদল একইরূপ বক্তব্য তুলে ধরেছিল। যে বক্তব্যের মধ্যে মূলত ছিল পার্বত্যবাসীদের স্বাতন্ত্র্যের প্রতি সাংবিধানিক সুরক্ষার আর্জি– তথা একটা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মাঝে পার্বত্য অঞ্চলের পৃথকত্বের স্বীকৃতি। গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা নিচের ৪টি দাবী পেশ করেন,
১) পাহাড়ের স্বায়ত্বশাসন
২) পার্বত্য এলাকার জন্য ১৯০০ সালের ম্যানুয়েল অব্যাহত রাখা
৩) তিন জাতির চীফের দপ্তর বিলুপ্তি না করা এবং
৪) ঐ এলাকায় বাঙালী অনুপ্রবেশ রোধ করা।
সব শুনে মুজিব বললেন, ‘লারমা তুমি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করো তাহলে এক লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ, দশ লাখ বাঙালি পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকিয়ে দেব। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি তোমাদের সংখ্যালঘু করে ছাড়ব।’
(সূত্রঃ পার্বত্য শান্তিচুক্তিঃ বর্তমান প্রেক্ষিত, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া)
“সদ্য স্বাধীন যেকোন দেশে সংবিধান সভাতেই রাষ্ট্রীয় স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদেও উপরে উল্লিখিত মাওরুম গ্রামের(১৯৬২ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থ অন্যতম একটি গ্রাম) ‘অনোমা কুঠির’-এর মেজো ছেলে মঞ্জু তথা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের কিছু স্বপ্নের কথাই তুলছিলেন বারেবারে। কিন্তু সেসব কথা তুলতে যেয়ে তাঁকে গণপরিষদে এবং পরে দেশের প্রথম নির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রায় প্রতি অধিবেশনে যেরূপ হেনস্থা হতে হতো সেই মানসিক লাঞ্চনার বিবরণ বাংলাদেশের আজকের প্রজন্ম কতটা জানে? বাংলাদেশ ভূখন্ডের প্রায় এক দশমাংশ ঐ পাহাড়ি এলাকায় আজও যে অস্বাভাবিক অবস্থা– তার দায় রাজনৈতিকভাবে বাঙ্গালিদের কতটা এবং পাহাড়িদের কতটা সেটা বোঝাপড়ার জন্য যদি ১৯৭২-৭৩-৭৪ সালের পার্লামেন্টারি প্রসিডিংসগুলোর প্রতি আবার নজর ভুলানো হয় তাহলে বাংলাদেশ কি বিব্রত হবে? (আলতাফ পারভেজ,২০১৭ )
‘পার্লামেন্ট যদি সমগ্র দেশের প্রতিনিধি হয়, তাহলে বাছাইকৃত ১-২টি ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষপাত কতটা গ্রহণযোগ্য? যদি পাঠ করতেই হয়, পবিত্র কোরাআন ও গীতার পাশাপাশি অধিবেশনের শুরুতে বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠেরও যৌক্তিকতা রয়েছে কি না?’
-মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা/৭ এপ্রিল ও ২ জুন ১৯৭৩।
‘মূলত হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের কোন প্রভেদ নাই। আর ত্রিপিটক পড়ার মতো কাউকে পাওয়াও যাচ্ছে না–সুতরাং আগামীতে লারমা নিজেই যেন অধিবেশনে ত্রিপিটক পাঠ করার প্রস্তুতি নিয়ে আসেন।’
-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইনমন্ত্রী/১৯৭৩
‘ ১৯৭২ সালের ২৫ অক্টোবরের পার্লামেন্টারি সংলাপের বিবরণীতে দেখতে পাচ্ছি, তিনি অধিবেশনে তাঁর নামের বিকৃত পাঠের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁকে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বলার জন্য অনুরোধ করছেন। বিস্মিত হতে হয়, জাতিগত বঞ্চনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণপরিষদে শ্রী লারমাকে সেদিন এভাবে আত্মসম্মানের জন্য লড়তে হচ্ছিলো একা একা– আর কোন পরিষদ সদস্যকে তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল না।’ (আলতাফ পারভেজ,২০১৭) ।
‘পাকিস্তানের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ যে অভিশপ্ত জীবন যাপন করেছিল, সেটাই কেন স্বাধীন বাংলাদেশের একাংশ হয়েও পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী ভবিষ্যতেও করবে? তার পৃথক ইতিহাস ও পৃথক চাহিদার স্বীকৃতি কেন নতুন সংবিধানে থাকবে না?’
‘সাড়ে সাতকোটি বাঙ্গালির সঙ্গে পাহাড়িদেরও খসড়া সংবিধানে যদি বাঙ্গালি বলা হয় সেটা তো অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ! উপজাতি হওয়ার চেয়ে জাতি হতে পারা তো অধিক সম্মানের!’
–ফরিদপুর অঞ্চলের একজন খ্যাতনামা নারী পরিষদ সদস্য/২৫ অক্টোবর, ১৯৭২
১৯৭২-এ গণপরিষদের বিতর্ককালে ৩১ অক্টোবর যখন সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদের সংশোধনী প্রস্তাব উঠলো, ‘বাংলাদেশের নাগরিকরা বাঙ্গালি বলিয়া পরিচিত হইবেন’ (যা ছিল প্রথমে কেবল ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে’), ( আলতাফ পারভেজ,২০১৭)
‘আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি, সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে বাস করে আসছে। বাংলা ভাষায় লেখাপড়া শিখে আসছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু আমি একজন চাকমা। আমার বাপ, দাদা, চৌদ্দ পুরুষ– কেউ বলে নাই, আমি বাঙ্গালি। আমি জানি না, আজ এই সংবিধান আমাদের কেন বাঙ্গালি বলে পরিচিত করাতে চায়।’
– মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা /৩১ অক্টোবর, ১৯৭২
‘আপনি কি বাঙ্গালি হতে চান না?’ –
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরর স্পীকার(প্রথম গণপরিষদ/৩১ অক্টোবর, ১৯৭২)
‘মাননীয় স্পিকার সাহেব, আমাদিগকে বাঙালি জাতি বলে কখনো বলা হয় নাই। আমরা কোনদিনই নিজেদের বাঙ্গালি বলে মনে করি নাই…।’
– মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা/৩১ অক্টোবর,১৯৭২
‘বলাবাহুল্য, বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মুখে একজন স্বতন্ত্র সদস্যের সংবিধানের (৬ অনুছেদের সংশোধনী বিল ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর) সংশোধনী প্রস্তাবটির পাস হওয়া থামাতে পারেনি। লারমা শুধুই হাউস থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন মাত্র।’( আলতাফ পারভেজ, ২০১৭)
‘…বাঙাালি হিসেবে পরিচয় দিতে রাজী না হয়ে বাবু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেছেন।…তিনি যাঁদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁদের প্রস্তাব উত্থাপন না করে, বাঙ্গালি-পরিচয়ের প্রতিবাদে যাদের নাম করে এই পরিষদ কক্ষ পরিত্যাগ করে চলে গেছেন, তারা বাঙ্গালি জাতির অঙ্গ। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ৫ লক্ষ উপজাতি রয়েছে, তাঁরা বাঙ্গালি। তারা সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির অঙ্গ…।’
-বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একজন জ্যেষ্ঠ পরিষদ সদস্য (মন্ত্রী) / ৩১ অক্টোবর ,১৯৭২
Mar. 14, 1973 – March 14th, 1973 Election in Bangladesh. Prime Minister Sheikh Mujibur Rahman faces a battery of cameras when he cast his vote in the recent general election in Bangladesh, in which his Awami League gained an overwhelming victory. Couyurtesy:Keystone Pictures USA / Alamy Stock Photo
তোরা বাঙ্গালী হয়ে যা!’
– শেখ মুজিবর রহমান,১৯৭৩ (নির্বাচনী জনসভায়, পার্বত্য অধিবাসীদের উদ্দেশে)
“বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে এম এন লারমা গণপরিষদের একজন স্বতন্ত্র সদস্য হয়েও মহাকাব্যিক এক রাজনৈতিক লড়াই চালিয়েছিলেন। যদিও তাঁর সেদিনকার সংগ্রামের মর্মমূলে ছিল পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের অধিকারের প্রশ্ন– কিন্তু পার্লামেন্টারি প্রসিডিংসে দেখা যাচ্ছে, পুরো বাংলাদেশের মানুষের জন্যই মানবিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয় এমন একটি সংবিধানের জন্য সর্বোচ্চ সংগ্রাম করেছিলেন তিনি। অবশ্যই এর শুরু হয়েছিল আপন জাতিসত্তার বেদনার কথা তুলে ধরার মধ্যদিয়ে।” – (আলতাফ পারভেজ, ২০১৭)
২০০৮ খ্রি. নির্বাচনের পূর্বে জাতির উদ্দেশ্যে নির্বাচনী ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস ও বৈষম্যমূলক আচরণের অবসান ঘটনো হবে। ভূমির উপর তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। এবং তারা তাদের আচার আচরণ সংস্কৃতি ধর্ম যাতে সহজভাবে পালন করতে পারে সে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা হবে’ (সংবাদ ২৯.১২.২০০৮)।
২০০৩ খ্রি. তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদিবাসী দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল আদিবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ আদিবাসী। আদিবাসীরাও আজ সকলের মতোই সমান মর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশের নাগরিক। মুক্তিযুদ্ধে যেমন দেশগঠনেও তেমনি আদিবাসীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আদিবাসীদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আমরা বিভিন্নমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছি। আদিবাসীদের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আমাদের আদিবাসী জনগণের কল্যাণ ও সাফল্য কামনা করি।’
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২০০১ খ্রি. এর নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছিলো ‘আদিবাসী’ শিরোনাম দিয়ে। ‘আদিবাসী জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে।
১১ দল ২০০১ খ্রি. এর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও আদিবাসী সমাজ’ ক্যাপসান দিয়ে বলেছিলো- ‘সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর স্বকীয়তার পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
১১ দল ২০০১ খ্রি. এর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও আদিবাসী সমাজ’ ক্যাপশন দিয়ে বলেছিলো- ‘সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর স্বকীয়তার পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির ২০০৮ খ্রি. নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়- ক. সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর স্বকীয়তার পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা। জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর প্রদান এবং সেই অনুসারে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। গ. সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তার স্বার্থ রক্ষা, অধিকার নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তা প্রদান এবং বিকাশের জন্য এ সকল জাতিসত্তার মানুষদের প্রতিনিধিত্ব সংবলিত পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ও আদিবাসী কমিশন প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিশেষ কোটার ব্যবস্থা রাখা। ঘ. ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য চুক্তি’র পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য গঠিত ‘ভূমি কমিশন’ সঠিকভাবে কার্যকর করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বাস্তুভিটা ও ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। ঙ. জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সমাজ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভূমি ও প্রাণবৈচিত্র্য জীববৈচিত্র্য বিনাশকারী সব ধরনের তৎপরতার অবিলম্বে বন্ধ করা। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও বনের ওপর আদিবাসীদের অধিকার ও অংশীদায়িত্ব নিশ্চিত করতে ভূমি কমিশন গঠন করা। ইকোপার্ক, পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে তোলার সময় আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন, আদিবাসীদের জীবন-জীবিকাকে বিপন্নকরণ, বাস্তুচ্যুতকরণ ইত্যাদি বন্ধ করা। সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জনগণের অস্তিত্ব, পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবিকাকে বিপন্ন করে- এমন ধরনের তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করা। যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আগে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। চ. আলফ্রেড সরেন, পীরেন স্লাল, সত্যবান হাজং, চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডসহ আদিবাসীদের ওপর হত্যা, অত্যাচার, উৎপীড়নের ঘটনার বিচার করা। সমতল ভূমির সাঁওতাল, গারো, হাজং, ওরাঁওসহ সকল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে একটি ‘ভূমি কমিশন’ গঠন করা ও সংশ্লিষ্ট এলাকার খাস জমি বণ্টনে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া। এ বিষয়ে ১৯৫০ সালের ভূমিস্বত্ব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।(মিথুশিলাক মুরমু,২০১১)
জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ২০০১ খ্রি. এর নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছিলো- ক. মানবাধিকার কমিশন গঠন করে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহের ওপর রাষ্ট্র, সরকার কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনধিকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। খ. নারী সমাজ, সংখ্যালঘু, আদিবাসীসহ সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সকল বৈষম্যমূলক আইন, পদ্ধতি, প্রথা ও আচরণ বিলুপ্ত করা হবে। গ. রাষ্ট্র সরকার ও প্রশাসন সকল জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে এবং বৈষম্যমূলক কর্মপদ্ধতি বিলুপ্ত করা হবে ।
(মিথুশিলাক মুরমু,২০১১)
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২৩(ক) ধারায় উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে –
“রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।”
‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। বাংলাদেশে যদি কোনো আদিবাসী থেকে থাকে তবে সেটা হচ্ছে বাঙালি’।
-ড. দীপুমনি, ( দৈনিক ভোরের কাগজ,২০১১)
“….মঞ্জুরা একা নয়– এরকম আরও যেসব পাহাড়ি মানুষ সেদিন হাজার হাজার একর জমি হারালো তারাই বা কী পেল এবং কী পাচ্ছে? তাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক মুক্তিতে পাকিস্তান ভেঙ্গে জন্ম নেয়া নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রটিই বা কী ভূমিকা রাখতে পারলো? কাপ্তাই জলবিদ্যুতের আলোতে বাংলাদেশের অনেক গ্রাম আলোকিত হয়েছে, হচ্ছে– দশকের পর দশক ধরে, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে আজো কেন এত রাজনৈতিক অন্ধকার? “ (আলতাফ পারভেজ ,২০১৭)
“অদ্ভুত এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব বাংলাদেশে আদিবাসী বিষয়ক আলোচনা সর্বদা নিয়ন্ত্রণ ও রেগুলেট করে। কেননা এখনো সাধারণ্যে আদিবাসী বা ইন্ডিজেনাস এবং আদি-বাসিন্দা বা আরলিয়েস্ট মাইগ্রেন্টসের মধ্যকার ফারাক পরিষ্কার নয়।” -রহমান নাসির উদ্দিন, (দৈনিক ভোরের কাগজ, ,২০১৬)
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সমালোচনার আগে আত্মজিজ্ঞাসা প্রয়োজন- আমরাও তো পলিটিক্যাল প্রজেক্টে অবাঙ্গালী রাখি না । বাঙ্গালীর দেশ বাংলাদেশ’- এমন প্রচারণা কি চালানো হয় না ? ‘কিন্তু আমরা তো কাউরে বাদ দিই না’ – এমন আতত্মতুষ্টি নিয়া বাস করা লোকেরা ভুলে-ই গেছি – বাদ দিয়া দিছি… খালি বাইর কইরা দেই না …এইটুকু দয়া দেখাই । পার্বত্য এলাকায় যে অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব ও উর্দুভাষীদের প্রতি যে বঞ্চনা তাতে আমরা তো খুব পিছিয়ে নেই! বাংলাদেশের উপর একক আর্থ-সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদ কি প্রতিষ্ঠা পায়নি? বাংলাদেশ বলতে ‘ষোলয়ানা বাঙ্গালী’ তত্ব্ব কি প্রচারিত হয় না?
প্রশ্ন ওঠে, আমরা কি অহমিয়া বা বার্মিজদের চেয়েও নির্মম?
তার প্রতিত্তুর,আপেক্ষিক । কালশীতে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, সাওতাল পল্লী বা ২২ বছরের প্রকাশ্য অশান্ত পাহাড় কি এড়িয়ে যাওয়া যায়?
অবাঙ্গালী ব্যান্ড মাদলের ‘কর্নফুলীর কান্না’ গানের একটি লাইন উৎসর্গ করতে-ই হয় –
ওরে ও প্রিয় জন্মভূমি, আর কতকাল রক্ত দিবো তোমার বুকেতে?
ওরে ও প্রিয় মাতৃভূমি, আর কতকাল রক্ত দিবো তোমার বুকেতে ?
উত্তর মেলানোর অঙ্ক বড় স্বার্থপর!!! এদেশে-ই মানুষ হয়ে বাঁচতে পীরেন জান দিয়েছে ।